১৩ আষাঢ় ১৪৩১
 

সর্বশেষ

সুচিত্রা সেন

Aug 1, 2015, 9:07:59 PM

সুচিত্রা সেন


সুচিত্রা সেন ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বিখ্যাত অভিনেত্রী । বিশেষ করে উত্তম কুমারের সাথে অভিনয়ের কারনে তিনি সারা বাংলায় প্রচন্ড জনপ্রিয় হন। উত্তম-সুচিত্রা জুটি আজও বাংলা চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ জুটি হিসেবে পরিগনিত। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পান (শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কার -সাত পাকে বাঁধা ১৯৬৩ ছবির জন্য, মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব)।

সুচিত্রা সেন ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল এখনকার তৎকালীন পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জের বেলকুচির সেনভাঙার জমিদার বাড়িতে রমা দাশগুপ্ত (পরবর্তীতে সুচিত্রা সেননামে পরিচিত হন) জন্ম নেন। পরে পাবনা শহরের দিলালপুরের বাড়িতে কেটেছে তার শৈশব ও কৈশোর। সুচিত্রা সেন পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। ১৯৬০ এর দশকে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় পশ্চিমবঙ্গে চলে যান তারা।দেশ ত্যাগের সময় পাবনা শহরের দিলালপুরে প্রায় দুই বিঘা জমির উপর একতলা ভবন, পাশের প্রায় তিনবিঘা জমি, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সেনভাঙায় জমিদার বাড়িসহ প্রায়দুশ’ বিঘা জমি রেখে যায় সুচিত্রা সেনের পরিবার। ভারতের একজন প্রখ্যাত শিল্পপতির সন্তান দিবানাথ সেনকে তিনি বিয়ে করেন। ১৯৪৭ সালে তার একটি মেয়ে হয় যার নামমুনমুন সেন। সুচিত্রা সেনের বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত একজন গৃহবধু। তিনি বাবা-মায়ের পঞ্চম সন্তানএবং তৃতীয় কন্যা ছিলেন। পাবনাতেই তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষাদীক্ষা শুরু হয়।

১৯৫২ সালেশেষ কোথায় ছবির মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয় কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি। পরবর্তী বছরে উত্তম কুমারের বিপরীতে সাড়ে চুয়াত্তর  ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। ছবিটি বক্স-অফিসে সাফল্য লাভ করে এবং উত্তম-সুচিত্রা জুটি উপহারের কারনে আজও স্মরনীয় হয়ে আছে। বাংলা ছবির এইঅবিসংবাদিত জুটি পরবর্তী ২০ বছরে ছিলেন আইকন স্বরূপ। ১৯৫৫ সালের দেবদাস ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেন, যা ছিল তার প্রথম হিন্দি ছবি। উত্তম কুমারের সাথে বাংলা ছবিতে রোমান্টিকতা সৃষ্টি করার জন্য তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বিখ্যাত অভিনেত্রী। ১৯৬০ ও ১৯৭০ দশকে তার অভিনীত ছবি মুক্তি পেয়েছে। স্বামী মারা যাওয়ার পরও তিনি অভিনয় চালিয়ে গেছেন, যেমন হিন্দি ছবিআন্ধি। এই চলচ্চিত্রে তিনি একজন নেত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। বলা হয় যে চরিত্রটির প্রেরণা এসেছে ইন্দিরা গান্ধী থেকে। এই ছবির জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং তার স্বামী চরিত্রে অভিনয় করা সঞ্জীব কুমার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতেছিলেন। ১৯৭৮ সালে সুদীর্ঘ ২৫ বছর অভিনয়ের পর তিনি চলচ্চিত্র থেকে অবসরগ্রহণ করেন। এরপর তিনি লোকচক্ষু থেকে আত্মগোপন করেন এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায় ব্রতী হন। মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০৫ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য সুচিত্রা সেন মনোনীত হন, কিন্তু ভারতের প্রেসিডেন্টের কাছথেকে সশরীরে পুরস্কার নিতে দিল্লী যাওয়ায় আপত্তি জানানোর কারনে তাকে পুরস্কার দেয়া হয় নি। তার মেয়ে মুনমুন সেন এবং নাতনী রিয়া সেন ও রাইমা সেন ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

তার অভিনিত সিনেমার মধ্যে সাড়ে চুয়াত্তর (১৯৫৩), ওরা থাকে ওয়ারে (১৯৫৪), অগ্নিপরীক্ষা (১৯৫৪), শাপমোচন (১৯৫৫), সবার উপরে (১৯৫৫), সাগরিকা (১৯৫৬), পথে হল দেরি (১৯৫৭), হারানো সুর (১৯৫৭), দীপ জ্বেলে যাই (১৯৫৯), সপ্তপদী (১৯৬১), বিপাশা (১৯৬২), চাওয়া-পাওয়া, সাত-পাকে বাঁধা (১৯৬৩), হসপিটাল, শিল্পী (১৯৬৫), ইন্দ্রাণী (১৯৫৮), রাজলক্ষী ও শ্রীকান্ত (১৯৫৮), সূর্য তোরণ (১৯৫৮), উত্তর ফাল্গুনি (১৯৬৩) (হিন্দিতে পুনঃনির্মিত হয়েছেমমতানামে), গৃহদাহ (১৯৬৭), ফরিয়াদ, দেবী চৌধুরানী (১৯৭৪), দত্তা (১৯৭৬),  প্রণয় পাশা অন্যতম।

২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। 

 
 
 
পাবনা নিউজ২৪.কম
থানাপাড়া (হেলেন কটেজ), পাবনা-৬৬০০
ই-মেইলঃ newsroom@pabnanews24.com