১৩ আষাঢ় ১৪৩১
 

সর্বশেষ

ঘুরে আসতে পারেন নয়নাভিরাম পাকশী রিসোর্টে

Sep 4, 2015, 11:58:52 AM

ঘুরে আসতে পারেন নয়নাভিরাম পাকশী রিসোর্টে

মনকে সঙ্গী করে হংস বলাকার পাখায় চড়ে অসীমে উড়ে যেতে পথে নেমে পড়ূন আজই। ব্যস্ত এ জীবনের ক'দিন ছুটি নিয়ে বেড়িয়ে আসুন পাকশী রিসোর্ট থেকে। পাকশী রিসোর্ট পাবনা জেলার পদ্মা নদীর পাশে। ঢাকা থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার পথ। যমুনা সেতু থেকে এক ঘণ্টার রাস্তা। পাকশী রিসোর্টে যাওয়ার পথে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে দু'পাশের ধানক্ষেত দেখে। চিরচেনা সবুজের সমারোহ। দেশের স্বার্থে পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য বসতবাড়িটিকে গড়ে তোলা হয়েছে পাকশী রিসোর্ট হিসেবে।
কোথায় থাকবেন : এ রিসোর্টে পর্যটকদের জন্য রয়েছে তিনতলা বিশিষ্ট দুটি ভবন। বিদেশি স্থাপত্য কাঠামোয় গড়ে ওঠা এ রিসোর্টে এলে আপনাকে মনে হবে উন্নত বিশ্বের কোনো মনোমুগ্ধকর রিসোর্টে আছেন আপনি। বিশাল পাকশী রিসোর্টে পাবেন সবধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। এর প্রতিটি কক্ষই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সবকিছুতেই অত্যন্ত পরিপাটি, সাজানো-গোছানো। ভেতরের আসবাবপত্র রুচিশীল, মূল্যবান এবং আভিজাত্য। যে কোনো পাঁচতারা হোটেলের সমমানের। বিশাল ডাইনিং হল। বসার জায়গা, বুফে এবং বারবিকিউয়ের ব্যবস্থা। বৃহৎ এলাকা নিয়ে ছোট্ট একটি নিরিবিলি কুটির। কিন্তু প্রতিটিতে সকালের সূর্য আলো দিয়ে পরশ বুলিয়ে দেবে আপনার চোখেমুখে। পাবেন আধুনিকতার সব ছোঁয়া। দখিনা হাওয়া ও শিশিরভেজা রিসোর্টের নিরিবিলি মনোরম পরিবেশ আপনাকে সতেজ করবে। ডবল বেডরুম, অ্যাটাচড বাথ আর আছে ব্যালকনি। অবশ্যই সুন্দর সময় কাটবে পুরো রিসোর্টের মনোলোভা স্থানগুলোতে।

কী দেখবেন :পাকশী রিসোর্টে আছে ষড়ঋতু নামের একটি আধুনিক রেস্টুরেন্ট। এ রেস্টুরেন্টে ঘরোয়া পরিবেশে পরিবেশন করা হয় নদীর টাটকা মাছ। রিসোর্টের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশি, ইন্ডিয়ান, চায়নিজ, থাই কিংবা অন্যান্য বিদেশি খাবারের সুব্যবস্থা রয়েছে। পাবেন দেশি-বিদেশি ফলের নানা ধরনের জুস, বেকারি ও প্যাস্ট্রি শপ। পাকশী রিসোর্টের ভেতরে খেলতে পারেন নিজের মতো করে। আছে লন টেনিস, বাস্কেট বল, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, বিলিয়ার্ড, ক্যারম ও দাবাসহ আরও নানা ধরনের ইনডোর গেমস। হাঁটতে পারেন ফুলবাগান বা লেকের ধারে। সাঁতার কাটতে পারেন সুইমিং পুলের স্বচ্ছ পানিতে। 

ইচ্ছে করলে বসতে পারেন লেকের ধারে। হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হলে বসতে পারেন শান্ত বটের ছায়ায়। ছোট ছোট পাহাড়ে উঠতে পারেন প্রিয়জনের হাত ধরে। মন চাইলে কুঁড়েঘরে বিশ্রামও নিতে পারেন। রিসোর্টে আছে দেশি-বিদেশি প্রায় ৪ শতাধিক নানা প্রজাতির গাছ ও ফলের বাগান। আর যাই হোক, নিরাপত্তা পাবেন ষোলআনা। রিসোর্টের কাছেই পদ্মা নদী। মাত্র ১০ মিনিটের পথ। বিকেলে ঘুরতে পারেন পদ্মা নদীর ধারে। নৌকায় ভাসতেও পারেন। ইচ্ছে হলে বড়শি দিয়ে মাছও ধরতে পারেন।

পাকশী পড়েছে ঈশ্বরদী উপজেলায়। পাকশীই ছিল সাড়াঘাট থেকে নদীপথে কলকাতা যাওয়ার একমাত্র পথ, সেই সুবাদে এখানে গড়ে উঠেছে রেলওয়ে বিভাগীয় শহর। ঈশ্বরদী বাণিজ্যের স্থান। এখানে রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ রেলওয়ে জংশন, এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। দেখার মতো ঐতিহাসিক স্থান এটি। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কোলঘেঁষে লালন সেতু। এখানে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্ধারিত স্থান। রয়েছে ঈশ্বরদী ইপিজেড, নর্থবেঙ্গল পেপার মিল, ডাল ও আখ গবেষণা কেন্দ্র। আছে ফুরফুরা দরবার শরিফ। পাশেই পাবনা শহর মাত্র ১৫ মিনিটের পথ। যেখানে দেখতে পাবেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেনের বাড়ি, কোর্ট বিল্ডিং, শ্রীশ্রী অনুকূল ঠাকুরের আশ্রম, জোড়বাংলা, মানসিক হাসপাতাল, রায়বাহাদুরের গেট, পাবনা এডওয়ার্ড কলেজসহ অনেক পুরনো কীর্তি। আপনি জেনে খুশি হবেন, তৎকালীন উপমহাদেশে কোর্ট বিল্ডিংটি পটিনায় হওয়ার কথা থাকলেও পটিনার টি অক্ষরটির মাথা কাটা না থাকায় ভুলবশত তা পাবনা হয়। পাকশী রিসোর্ট থেকে লালন শাহের মাজারে যাওয়া যায় ২০-২৫ মিনিটে। ইচ্ছে করলে এখান থেকে শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়িতে সড়ক বা নদীপথেও যেতে পারেন। ঘুরে আসতে পারেন সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা থেকে। মুক্তিযুদ্ধকালীন দেশের প্রথম স্বাধীন রাজধানী সেই মুজিবনগরেও যেতে পারেন। যেতে পারেন বনলতা সেন খ্যাত নাটোরের রাজবাড়িসহ পুঠিয়া রাজবাড়িতেও। এসব দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের সব ব্যবস্থা করা হয় এ রিসোর্ট থেকেই। অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন যারা, আয়োজন করতে পারেন ক্যাম্প ফায়ারের এবং থাকতে পারেন তাঁবুতে। এখানে আছে একটি মিনি চিড়িয়াখানা। যেখানে দেখতে পাবেন চিত্রা হরিণ, বানর ও কালিম পাখি। উদ্যানে আছে অসংখ্য অর্কিড। বিশাল লেক, যেখানে আপনি পায়ে চালিত নৌকায় বোটিং করতে পারেন। আছে নানা প্রজাতির পাখি।

পাকশী রিসোর্ট প্রসঙ্গে এর পরিচালক মোনাজ্জামা মুসতারী তানিয়া বলেন, 'উত্তরাঞ্চলে এ ধরনের রিসোর্ট আর নেই। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বলতে যা যা বোঝায় আমরা এ রিসোর্টে সব কিছু রাখার চেষ্টা করেছি। কনফারেন্স, মিটিং, সেমিনার, বনভোজন বা পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠান এখানে যে কেউ আয়োজন করতে পারেন।' পাকশী রিসোর্টে আছে গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনের সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। এ ছাড়া ছোট-বড় সবার জন্য রয়েছে পাকশী অ্যামিউজমেন্ট পার্ক। সেখানে পাবেন বিভিন্ন আধুনিক রাইড, ৩উ সিনেমা ও মনকাড়া হেরিটেজ জোন। এই হেরিটেজ জোনে এলে মনে হবে আসল গ্রামবাংলার চিত্র। 

যেখানে আপনাকে গ্রামীণ ঐতিহ্যে বসতে দেওয়া হবে। পিঠা-পায়েস, ঢেঁকিছাটা চালের ভাতও খেতে পারেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো_ এই অ্যামিউজমেন্ট পার্কে একটি মিনি ট্রেনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যে ট্রেনটির স্টেশন মাস্টারের দায়িত্ব পালন করে সোনা-রুপা নামের দুই বানর। এরই মধ্যে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে পাকশী রিসোর্ট। আমাদের দেশে অনেক পর্যটন কেন্দ্র আছে; কিন্তু সেগুলোতে ভিড় লেগেই থাকে, একটু নিরিবিলি পাওয়া ভার। সেদিক থেকে পাকশী রিসোর্ট আপনাকে দেবে অনাবিল প্রশান্তি। যে কেউ স্বল্প খরচে বেড়িয়ে আসতে পারেন পাকশী রিসোর্ট থেকে। এ ছাড়া সেবা পাবেন উন্নতমানের। আর খরচ সাধ্যের মধ্যে। যারা নগর জীবনের ক্লান্তিতে হাঁপিয়ে উঠেছেন, কিছুটা সময়ের জন্য একটু নির্মল বাতাস আর আনন্দ পেতে চান, তারা নিদ্বর্িধায় চলে যেতে পারেন পাকশী রিসোর্টে। সেই সঙ্গে আপনি লোকজ সঙ্গীত উপভোগ করতে পারেন।
পাকশী রিসোর্টে আছে মেম্বার হওয়ার বিশেষ সুযোগ। স্বল্প খরচে এ রিসোর্টের মেম্বারশিপ লাভ করতে পারেন আপনি। মেম্বার হিসেবে পাবেন বছরে তিন দিন পরিবার নিয়ে থাকা, খাওয়াসহ বিশেষ সুযোগ-সুবিধা। যাতায়াত সুবিধাসহ বিশেষ গিফট হ্যাম্পার। এ ছাড়া বিশেষ ছাড় তো রয়েছেই। এখানে আছে নানা প্যাকেজ প্রোগ্রাম। যোগাযোগ করে জেনে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্যাকেজটি।


কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে মহাখালী-কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে যেতে হবে পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশীতে। পাবনা, কুষ্টিয়া বা নাটোর শহর থেকে পাকশী রিসোর্ট মাত্র ২০-২৫ মিনিটের পথ। ছায়াঘেরা গ্রাম। ছিমছাম প্রাচীন ঐতিহ্যের রেলওয়ে শহর। ট্রেনেও যেতে পারেন আপনি। ঢাকা থেকে ট্রেনে যেতে হলে কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে উত্তরবঙ্গ বা দক্ষিণবঙ্গের যে কোনো ট্রেনে উঠে ঈশ্বরদী বাইপাস বা জংশনে নেমে পাকশী যেতে পারেন। সেখানে রিকশা বা গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। মাত্র ১০ মিনিটের পথ। প্রশস্ত পথ, চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। যেতে যেতে আপনি উপভোগ করতে পারেন গ্রামীণ পরিবেশ। চারদিকের সবুজের মমতায় ঘিরে থাকা বিশাল শতবর্ষী বৃক্ষরাজি। যা দেখার জন্য পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে। একসময়কার ভয়ঙ্কর 
পদ্মার গর্জন মিশে গেছে শান্ত-সি্নগ্ধ পাকশীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে। রয়েছে হাজারো কলকাকলিভরা অতিথি পাখির বিমুগ্ধ গুঞ্জন। 


 
 
 
পাবনা নিউজ২৪.কম
থানাপাড়া (হেলেন কটেজ), পাবনা-৬৬০০
ই-মেইলঃ newsroom@pabnanews24.com