১৩ আষাঢ় ১৪৩১
 

সর্বশেষ

অস্তিত্ব সংকটে পাবনার ঐতিহ্যবাহী প্রতিমা শিল্পীরা

Oct 11, 2015, 1:30:32 PM

অস্তিত্ব সংকটে পাবনার ঐতিহ্যবাহী প্রতিমা শিল্পীরা

রিজভী জয় : শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে প্রতিমা তৈরিতে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাবনার চাটমোহর উপজেলার বেলগাছি গ্রামের প্রতিমা শিল্পীরা। তবে বংশপরম্পরায় সুদক্ষ হাতে প্রতিমা সাজিয়ে উৎসবকে রাঙিয়ে তোলা মানুষগুলোর মন ভালো নেই এবার। নানা সংকটে তাদের পেশার অস্তিত্বই এখন হুমকির মুখে।

জেলা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের চলনবিলাঞ্চলের বেলগাছি গ্রাম। চারিদিক পানিবন্দি একটি দ্বীপের মতো এ গ্রামে যাতায়াতের একমাত্র বাহন নৌকা। এ গ্রামেই কয়েক পুরুষ ধরে প্রতিমা তৈরি করে আসছে পালপাড়ার ২০ পরিবার।

বছরের অধিকাংশ সময় প্রতীমা তৈরিতে ব্যস্ত থাকলেও দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এসব মানুষের দম ফেলার মতো সময় নেই এখন। চলছে প্রতিমায় রং ও সাজসজ্জার কাজ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই গ্রাহকদের প্রতিমা সরবরাহ করতেই যত ব্যস্ততা তারা।

প্রতিমা শিল্পীরা জানান, প্রতিবছর বেলগাছি থেকে পাবনার বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় প্রতিমা সরবরাহ করা হয়। যুগ যুগ ধরে চলছে প্রতিমা তৈরি ও সরবরাহের কাজ। সেই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার বছর থেকে বেলগাছিতে প্রতিমা তৈরি শুরু করেন শ্যামল পাল। তিনি কলকাতা থেকে কাজ শিখে এসেছিলেন।

তার কাছ থেকে কাজ শিখে এখন গ্রামে প্রায় ২০টি পরিবার যুক্ত হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজে। বয়সের ভারে ন্যুজ এই শ্যামল পাল কাজ করে যাচ্ছেন এখনো। বর্তমানে কাজ কেমন চলছে জানতে চাইলে আক্ষেপের সুরে তিনি নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’কে বলেন, ‘প্রতিমা তৈরি সৃষ্টিশীল কাজ। অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয় এখানে। সবাই তা পারে না। কিন্তু সারাটা জীবন এ শিল্পে ব্যয় করেও পাইনি শিল্পীর মর্যাদা। যে মজুরি পাই তা শিল্পী কেন, লেবারের মজুরিও হয় না’।

বর্তমানে মাটি, বাঁশ, কাঠ, দড়ি, খড়, রং, চুলসহ প্রতিমা তৈরির প্রায় সব উপকরণের দাম বেড়েছে অনেক। কিন্তু বাড়েনি প্রতিমার দাম। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন প্রতিমা শিল্পীরা। প্রতিটি প্রতিমা তৈরিতে ব্যয় হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায়।


এদিকে, বিদ্যুৎ বিভ্রাটে কাজে চরম বিঘ্ন ঘটছে মৃৎশিল্পীদের। প্রতিমা শিল্পী সুচিত্রা পাল নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’কে জানান, ‘এখন তারা প্রতিমায় রং দেয়ার কাজ করছেন। রংয়ের স্প্রে মেশিন চালাতে বিদ্যুৎ দরকার। কিন্তু দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুতের জন্য গভীর রাত পর্যন্ত বসে থাকতে হয়। অর্ডার ডেলিভারির সময় এসে গেছে, কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে কাজই শেষ করা যাচ্ছে না।’


অন্যদিকে যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশায় দিন দিন কমে যাচ্ছে প্রতিমা ক্রেতার সংখ্যা। প্রতিমা শিল্পী অমল পাল নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’কে জানান, ‘বেলগাছি গ্রামে আসার জন্য কোনো সড়কপথ নেই। নৌকায় করে প্রতিমা দূর-দূরান্তে পাঠানো যায় না। গ্রামে ট্রাক আসতে পারে না। নৌকা থেকে ট্রাকে প্রতিমা তুলতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। পরিবহন খরচও অনেক বেড়ে যায়। এসব কারণে দিন দিন আমাদের অর্ডার কমে যাচ্ছে’।

রথযাত্রার পর থেকে বছরে চার মাস প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন বেলগাছির প্রতিমা শিল্পীরা। কিন্তু বছরের অন্যান্য সময়ে তাদের তেমন একটা কাজ না থাকায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। সে সময় মাটির হাঁড়ি-পাতিল, ফুলের টব, পুতুল, খেলনা তৈরি করে কোনমতে তাদের দিন চলে। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক খেলনা আর প্লাস্টিক পণ্যের প্রভাবে প্রতিনিয়ত সংকুচিত হয়ে পড়ছে তাদের আয়ের পথ। অনেকে বাধ্য হচ্ছেন পূর্ব-পুরুষের পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে।

গ্রামের প্রতিমা শিল্পীরা জানান, সরকারি কোন ঋণ সুবিধা না পাওয়ায় পূজার আগে প্রতিমা তৈরির জন্য উপকরণ কিনতে তাদের বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিতে হয়। প্রতিমা বিক্রি করে যে টাকা লাভ হয়, তার একটা বড় অংশই সে ঋণের সুদ দিতে চলে যায়।এমতাবস্থায় ঐতিহ্যবাহী এ পেশার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সহজ শর্তে ঋণসুবিধা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের পৃষ্ঠপোষকতার দাবি করেছেন এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

 
 
 
পাবনা নিউজ২৪.কম
থানাপাড়া (হেলেন কটেজ), পাবনা-৬৬০০
ই-মেইলঃ newsroom@pabnanews24.com