১৭ আষাঢ় ১৪৩১
 

সর্বশেষ

পাকশী হতে পারে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র

Sep 27, 2013, 8:54:30 AM

পাকশী হতে পারে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র

পাবনা/ঈশ্বরদী: রেলের শহর আর পদ্মার রূপসী কন্যা হিসেবে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ভ্রমণপ্রিয় মানুষের কাছে হয়ে উঠেছে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। এখানকার চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক দৃশ্য কাছে টানে যেকোনো বয়সের মানুষকে। 

প্রায় প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো মানুষ স্বজনদের নিয়ে পাকশীতে ছুটে যাচ্ছেন একটু বিনোদনের আশায়। ছুটির দিনে পর্যটক প্লাবনে ভেসে যায় পাকশী জোড়া সেতুর মিলনস্থল। 

শুক্রবার বিশ্ব পর্যটন দিবস। পাকশীতে রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। সরকারের যথাযথ ব্যবস্থার মাধ্যমে পাকশীতে গড়ে উঠতে পারে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ৪ হাজার ৫৪৭ একর আয়তনের পাকশী সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪২ ফুট উঁচু। পদ্মা অববাহিকার এই স্থানটি ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরা পত্তন করে। 

পদ্মা নদীর ওপরে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর মিলনস্থল নজর কাড়ে সবার। ব্রিটিশ বাংলোগুলোর বাঁকে বাঁকে ইতিহাস যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। বিকেলের সূর্য যখন পদ্মা পাড়ে ডুব দেয় তখন আপনি হারিয়ে যাবেন ভালো লাগার সমুদ্রে। এখানে বসে প্রিয়জনের সঙ্গে পূর্ণিমার জোছনা কিংবা জোছনা-মেঘের লুকোচুরি আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক জগতে।

ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে পাকশী অতুলনীয়। পদ্মায় নৌবিহারের সুযোগ নেই, জোয়ার ভাটা নেই, চোরাবালি আছে। আরও আছে নির্জনতা। 

মনোরম ভ্রমণ বিলাস কেন্দ্র হিসেবে পাকশীর যে সম্ভাবনা রয়েছে তা সম্পূর্ণ সার্থক হতে পারেনি দু’টি কারণে। প্রথমত থাকার ও দ্বিতীয়ত খাওয়ার অসুবিধা। এছাড়া টয়লেট সমস্যা। পদ্মায় গোসলের ব্যবস্থা থাকলে পর্যটকদের মন আরও টানতো। তারপরেও আশ-পাশের জেলা উপজেলা থেকে ভ্রমণ পিপাসু ও উদ্ভিদপ্রেমীদের মনকে টানে মাধ্যকর্ষণের মতো। শিক্ষার্থীরাও শিক্ষা সফরে আসেন এখানে। 

কিন্তু এখানকার কিছু সমস্যা আনন্দের মাঝে বইয়ে দেয় নিরানন্দের বাতাস। এখানে ফুরফরা খানকা শরীফ চত্বরে অনুভব করা ও দেখার মতো স্থাপত্য শিল্প রয়েছে। নিথর পদ্মা অভ্যর্থনা জানায় পর্যটকদের। এ সময় ছাতিম শরতের ঘ্রাণ প্রাক সন্ধ্যায় ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। 

এখানে বন নেই, প্রাচীন বৃক্ষ আছে। হিংস্র প্রাণী নেই, পাখি আছে। উপত্যকা নেই, বাঁধের ঢাল আছে। পাহাড়ি পথ নেই, টানেল আছে। মেঘ পাহাড়ের খেলা নেই। মাঠের হাওয়া আছে। 

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ভ্রমণপিপাসুদের উপচে পড়া ভিড়। ভ্রমণে আসা সাইফুল ইসলাম ও রকিবুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, তারা বগুড়া ও কুষ্টিয়া থেকে পাকশীতে বেড়াতে এসেছেন। লালন শাহ সেতু, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, পদ্মার পাড় সবকিছু তাদের কাছে খুবই ভালো লেগেছে বলে জানান।
 
সাবরিনা পারভীন বাংলানিউজকে জানান, দর্শনীয় স্থান হলেও এখানে বেশকিছু সমস্যা রয়েছে। বসার মতো বা প্রাকৃতিক কাজ সারার মতো ব্যবস্থা নেই। রয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থারও অভাব। আমরা চাই এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠুক। 

স্থানীয় সংবাদকর্মী মহিদুল ইসলাম ও সাংস্কৃতিক কর্মী আতাউর রহমান বাবলু বাংলানিউজকে জানান, পাকশীতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য ঈশ্বরদীবাসী দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সে দাবি সবসময় উপেক্ষিত থেকে গেছে। পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে শুধু ভ্রামণ পিপাসুদের সুবিধাই হবে না এখান থেকে সরকারও বিপুল রাজস্ব আয় করতে পারে।

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, পাকশীকে পর্যটন কেন্দ্র করার কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি খুব শিগগিরই পাকশীতে পর্যটন কেন্দ্র করার ঘোষণা দেবে সরকার। 

স্থানীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান শরীফ ডিলু বাংলানিউজকে জানান, পাকশীকে পর্যটন করার বিষয়টি মহাজোট সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন। পাকশীকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সময়ের ব্যাপার মাত্র। এখানে পর্যটন কেন্দ্র হবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

পরিবার নিয়ে একদিনের স্বাস্থ্যকর সফরে বিভোর হওয়ার নাম পাকশী। কৃত্রিম ও অকৃত্রিম দৃশ্যে অভিনব। নদী নদী করে নেচে ওঠা মন নদী তীরে পায়চারি করে পুলকিত হয়। মধ্যরাত পর্যন্ত ঘোরার পরিবেশ নেই বলে পর্যটকরা সন্ধ্যা রাতেই ঘরে ফেরেন। খুব শিগগিরই পাকশীতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠবে এমনটাই প্রত্যাশা ভ্রমণ পিপাসুদের।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৩ 

 
 
 
পাবনা নিউজ২৪.কম
থানাপাড়া (হেলেন কটেজ), পাবনা-৬৬০০
ই-মেইলঃ newsroom@pabnanews24.com