১৭ আষাঢ় ১৪৩১
 

সর্বশেষ

উত্তরের তিন জেলায় মৎস্য ভা-ারে নেই পৃষ্ঠপোষকতা : শুঁটকিতে বছরে আয় প্রায় ২০ কোটি টাকা

Oct 20, 2013, 3:45:25 AM

উত্তরের তিন জেলায় মৎস্য ভা-ারে নেই পৃষ্ঠপোষকতা : শুঁটকিতে বছরে আয় প্রায় ২০ কোটি টাকা

পাবনা থেকে মুরশাদ সুবহানী ও আফতাব হোসেন : ইতিহাসের পাতায় সাক্ষ্য মেলে ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে পাবনার চলনবিল এলাকার দিলপাশায় একটি রেলওয়ে স্টেশন করা হয়। উল্লাপাড়া-চাটমোহর এই রেলপথের মাঝামাঝি স্থানে দিলপাশা স্টেশনটি করা হয়েছিল শুধুমাত্র চলনবিলের মাছ নিয়ে যাওয়ার জন্য। কালের করালগ্রাসে চলনবিল এলাকা এবং এর আশপাশের নদ-নদীর পানির নব্যতা কমেছে। ভারতের ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে এই উপজেলার উপর দিয়ে বহমান আত্রাই, চিকনাই, বড়াল এবং ইছামতি নদ-নদীর পানির নব্যতা হ্রাস পাওয়ায় নদ-নদীর এবং চলনবিলের মুক্ত অঞ্চলে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। কোনমতে যেটুকু মাছ পাওয়া যায় তাই দিয়ে এই অঞ্চলের মৎস্যজীবীদের জীবন জীবিকা চলছে। পাবনার চাটমোহরসহ চলনবিল এলাকায় ভাদ্র মাসে পানি নামতে শুরু করায় সুস্বাদু দেশি ছোট-বড় মাছ ধরা পড়ছে। ব্রিটিশ আমলের চেয়ে এই মাছের পরিমাণ অনেক কম হলেও যা পাওয়া যাচ্ছে তা এখন শুঁটকি করা হচ্ছে। গড়ে উঠেছে অনেক শুঁটকির চাতাল। এই চাতালে আহরিত মাছ শুকানোর কাজ করছে নারী-পুরুষ মৎস্যজীবী পরিবারের সদস্যরা। তথ্য মতে, এবার সহস্রাধিক নারী-পুরুষ শুঁটকি মাছ তৈরি করার চাতালে কাজ করে যাচ্ছেন। উত্তরের জেলায় বিশেষ করে পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ কুড়িগ্রাম এই জেলাসমূহে সামুদ্রিক মাছের আমদানি খুব বেশি হয় না। চিটাগাং অঞ্চলের শুঁটকি বেশিরভাগ রাজধানীর বাজার দখল করে রেখেছে। এই শুঁটকি নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে ফরমালিন এবং পোকা-মাকড় দমন করতে জনস্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক হুমকি এবং দেশে ব্যবহার নিষিদ্ধ গেমাগসিন (বিষ) পাউডার প্রয়োগ করা হয়। এগুলো দেখভাল করা যাদের দায়িত্ব তারা তা ঠিকভাবে করেন না বলেই গেমাগসিন এবং ফরমালিনের মতো রাসায়নিক উপাদান শুঁটকিসহ অনেক কিছুতেই ব্যবহৃত হচ্ছে। পাবনার ইতিহাসে স্বাস্থ্য বিভাগ প্রথম গেমাগসিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন চাটমোহর এলাকায়। এখানে বেলে মাছির কারণে কালাজ্বরের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে এক সময় ডিটিটি (লোকাল নাম গেমাগসীন) পাউডার পানির সাথে মিছিয়ে মাছি নিধনে ব্যবহার করা হতো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই পাউডারের ভয়াবহতা তুলে ধরে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে স্বাস্থ্য বিভাগকে সাথে নিয়ে কাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে এই পাউডার প্রয়োগ স্বাস্থ্য বিভাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু শুঁটকি মাছে ডিটিটি (ডাই নাইট্রো টুলুইন) ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে চাটমোহর-চলনবিল এলাকার শুঁটকি চাতালে নিয়োজিতরা জানান, তাদের শুঁটকিতে কোন ডিটিটি প্রয়োগ করা হয় না। সামান্য লবণের পানি দেয়া হয়। এটা ক্ষতির কিছু নয়। এই অঞ্চলের শুঁটকি বাজারে খুব দ্রুত বিক্রি হয়ে যাওয়ার কারণে কোন রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। যদিও বিএসটিআই বা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কোন টিম এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করেননি। 
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, আশানুরূপ মাছ আহরিত হলে এ মৌসুমে প্রায় ১শ’ মেট্রিকটন শুঁটকি পাওয়া যাবে। যার বাজারমূল্য আনুমনিক ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা। পাবনার চলনবিল এলাকার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, নাটোরের সিংড়া গুরুদাসপুর এলাকার প্রায় ৫শ’ চাতালে দেশি প্রজাতি মাছের শুঁটকি করা হচ্ছে। এসব শুঁটকির মধ্যে টেংরা, পুঁটি, ঢেলা, মলা, টাকি, খলসে, চিংড়ি এবং চাঁদা প্রভৃতি মাছ রয়েছে। চাঁদা, লটকন এগুলো সামুদ্রিক অঞ্চলের মাছ। চলনবিলে চাঁদা মাছ পাওয়া গেলেও তা সামুদ্রিক অঞ্চলের চাঁদা মাছের মতো বড় নয়। তবে চলনবিলের মিঠাপানির শুঁটকি সুস্বাদু। চলনবিল এলাকার শুঁটকি উত্তরের জেলার বাজার ছাড়াও রাজধানীর বাজারেও বিক্রি হয়।


 
 
 
পাবনা নিউজ২৪.কম
থানাপাড়া (হেলেন কটেজ), পাবনা-৬৬০০
ই-মেইলঃ newsroom@pabnanews24.com