১৩ আষাঢ় ১৪৩১
 

সর্বশেষ

চলমান রাজনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়বে তরুণ প্রজন্মের উপর

Dec 1, 2013, 1:34:20 AM

চলমান রাজনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়বে তরুণ প্রজন্মের উপর

তানভীর চৌধুরী : ‘একবার এক আমেরিকান চিত্রকারের শখ হল সে যীশুর ছবি আঁকবে। যীশু, খ্রিষ্টান ধর্মের প্রবর্তক। আর যীশু মানে তো যেন তেন লোক নয়, একেবারে নিষ্পাপ একজন। তাই, তার মডেলও হতে হবে একে বারে নিষ্পাপ চেহারার কেউ একজন। স্বাভাবিকভাবেই নিষ্পাপ ধরে নেওয়া হয় অবুঝ শিশুদেরকে, যারা পৃথিবীর কঠিন জালে নিজেদের এখনো আটকায়নি, কলঙ্কিত পরিবেশে গাঁ ভাসায় নি। চিত্রকারও তাই করলেন। পুরো শহরে সকল বাচ্চাদের পরখ করা শুরু করলেন। নিষ্পাপদের মধ্যে অধিকতর নিস্পাপের খোঁজে। অনেক খোঁজা খুঁজির পর চিত্রকার পেয়ে গেলেন তার কাঙ্ক্ষিত যীশুকে,মূলত যীশুর মডেলকে। বাচ্চাটির বাবা-মা তো ভীষণ খুশী, তাদের সন্তান হতে যাচ্ছে যীশুর মডেল,যার ছবি কিনা সকল খ্রিষ্টানদের ঘরের দেয়ালে সোভা পেতে পারে। যথারীতি যীশুর মডেলকে সামনে রেখে চিত্রকার এঁকে ফেললেন যীশুর ছবি। নিষ্পাপ শিশুর ছবি যতটা নিষ্পাপ হওয়ার কথা তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশী নিষ্পাপ দেখাচ্ছিল ছবিটি। কে জানে হয়ত যীশুর মডেল বলে আধ্যাত্মিক কিছু ছিল ছবিটিতে। যাই হোক, পুরো আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ল ছবিটি, সাথে চিত্রকারের খ্যাতি। সব মিলিয়ে রাতারাতি চিত্রকার বিখ্যাত হয়ে পড়লেন পুরো আমেরিকায়। এরপর, আরো অনেক ছবি আঁকলেন চিত্রকার। তারপর, অনেক বছর পর ঐ চিত্রকারের আবার শখ হল, জুডাসের ছবি আঁকার। যথারীতি নেমে পড়লেন মডেল খোঁজার কাজে। শয়তানের মডেল হতে হবে খুবই বীভৎস এবং ভয়ংকর চেহারার যাকে দেখেই মানুষের মনে একটা ঘৃণা জন্মাবে। কিন্তু, এবার তো মহাবিপদ। বীভৎস এবং ভয়ংকর চেহারার যাকেই শয়তানের মডেল হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে সেই চিত্রকারকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। কেই বা চায় শয়তানের মডেল হতে, আপনি চাইবেন? চিত্রকার মডেল খুঁজতে খুঁজতে হতাশ। তারপরও হাল ছাড়লেন না। আরেকদিন চিত্রকার মডেল খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে একটি শুঁড়িখানার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ তার সামনে দিয়ে একটা বীভৎস এবং ভয়ংকর চেহারার লোক শুঁড়িখানা থেকে দৌড়ে বের হয়ে সামনে যেতে লাগল। চিত্রকার তো মহা খুশী, মনে মনে বলতে লাগলেন, 'আরে আমি তো একেই খুঁজছি'। তখন চিত্রকার ঐ বীভৎস এবং ভয়ংকর চেহারার লোকটিকে ডাকলেন এবং পিছু পিছু ছুটলেন। অনেক দূর যাওয়ার পর চিত্রকার ঐ লোকের নাগাল পেল এবং শয়তানের মডেল হওয়ার জন্য প্রস্তাব দিল। বীভৎস এবং ভয়ংকর চেহারার সামনে চিত্রকার মনে মনে ভয়ই পাচ্ছিলেন। যেখানে কেউই শয়তানের মডেল হতে রাজি হচ্ছিল না, সেখানে ঐ লোকটি কিছু একটা চিন্তা করে চিত্রকারকে অবাক করে দিয়ে রাজি হয়ে গেল। চিত্রকার ভয় কাটিয়ে এখন খুশীতে আত্নহারা। মডেলকে নিয়ে গেলেন নিজের বাসায়। মডেলকে সামনে বসিয়ে চিত্রকার শুরু করলেন ছবি আঁকা। চিত্রকার এঁকে চলেছেন শয়তানের ছবি। ছবি আঁকতে আঁকতে হঠাৎ চিত্রকার খেয়াল করল মডেলের চোখে জল, অর্থাৎ শয়তান কাঁদছে। চিত্রকার অবাক হয়ে যখন মডেলকে কাঁদার কারন জিজ্ঞাসা করল, তখন মডেল যা বলল তা আমার আপনার দুই জনেরই সহ্যসীমা এবং চিন্তাসীমার বাহিরে। মডেল কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমিই সেই ছেলে যে কিনা ১২ বছর আগে আপনার যীশুর মডেল হয়েছিলাম আর আজ আমি জুডাসের মডেল; পরিবেশ মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়, তাই না?’


আসলেই পরিবেশ মানুষকে কোথায় নিয়ে যায় তাই না। কোথায় ১২ বছর আগে একটি ছেলে যীশুর মডেল আর পড়ে জুডাসের মডেল। মাঝখানে পার্থক্য কেবল ১২ টি বছর আর দায়ী তার চারপাশের সমাজ কিন্তু ভুক্তভোগী সে নিজেই। পরিবেশ পারে যীশুকে জুডাস বানাতে আবার জুডাসকে যীশু বানাতে। এমন অনেক গল্প অবশ্য বাংলা সিনেমায়ও আমরা দেখেছি, কিন্তু যেটা নেওয়া হয় নি সেটা হচ্ছে শিক্ষা।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে পাঠক পড়তে পড়তে অনেকটা ক্লান্তই বলা চলে। একঘেয়ামিতা কাটাতেই গল্প দিয়েই শুরু করিছিলাম। আশা করি গল্পটা উপভোগ করেছেন। অযথা গল্প লিখি নি, গল্পের মধ্যেই আজকের পুরো বিষয় বস্তু নিহিত। গল্পটি পড়ে আশা করি পাঠক ইতিমধ্যে বুঝতে সক্ষম হয়েছেন আমি ঠিক কোন প্রজন্মের ক্ষতির দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছি। হ্যাঁ, এই চলমান অস্থির রাজনীতির শিকার হতে পারে আমাদের তরুণ প্রজন্ম। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে উড়তি বয়সী এইসব তরুণরা যেখানে ভবিষ্যৎ কর্ণধার, সেখানে তারাই কিনা দেশের রাজনীতির নোংরা হাতের থাবায় আহত। যার ফলে আজ যারা যীশুর মডেলের মত তরুণ তারাই একদিন জুডাসের পরিণত হবে। জাতিকে ঠেলে দিবে অন্ধকারের দিকে। 

গল্পটি দিয়েই আশা করি পাঠকের মনে ভবিষ্যৎ দুর্যোগের একটা রূপ রেখা তৈরি করতে পেরেছি। তাই এখানেই শেষ করা উচিত কিন্তু একটি নিউজ নিয়ে না লিখলেই নয়, তা হল, ২১ লাখ শিক্ষার্থী জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। ৪ নভেম্বর থেকে এসব পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভুগছে কোমলমতি এই শিক্ষার্থীরাও। বিক্ষোভ, সমাবেশ, হরতাল,অবরোধের মত কর্মসূচীর মধ্যে পরীক্ষা হবে, হবে না, স্থগিত ইত্যাদি অনিশ্চয়তায় জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার্থীরা। হরতাল কোন দল ডাকছে, কেন ডাকছে, বাধ্য হয়ে ডাকছে কিনা সেটা কেবল টকশোর বিষয়, আমাদের বিষয় হচ্ছে এতে আমাদের তরুণ প্রজন্মের ভীষণ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এইসব সমস্যায় দেখা যায় যে, আজ এই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তো সেটা স্থগিত হয়ে গেল কোন কর্মসূচীর জন্য। আবার, অন্য বিষয়ের প্রস্তুতি তো নতুন কোন কর্মসূচী। সব মিলিয়ে যে, হতাশায় ভুগছে তা তাদের সাক্ষাৎকার টিভি কিংবা পত্রিকায় দেখলেই বুঝা যায়। ইতোমধ্যে জেএসসি ও জেডিসির পরীক্ষার তারিখও পিছানো হল। কিন্তু আমার প্রশ্ন এই তারিখ পিছানো কি শুধুই তারিখ পেছানো, নাকি পুরো জাতিকেই পেছনে ঠেলে দেওয়া। শুধু তারাই নয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা সবকিছুতেই অপ্রত্যাশিত বিচ্ছিন্ন বাঁধার সৃষ্টি করছে এই অসুস্থ রাজনীতি। আর এর ভুক্তভোগী হচ্ছে শিক্ষানবিশ এইসব তরুণ প্রজন্ম পাশাপাশি তাদের অভিভাবক এবং গোটা জাতি। দেশ ও জাতির সেবা করার নামে রাজনীতিবিদরা কেবল সাধারণ জনগণকে বিরক্তই করছে, আর কিছু নয়। সাধারণ জনগণ প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ, যে যার অবস্থান থেকে এই সংকট থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজুন। চুপ থেকে কেউ কোন দিন সমাধান কিংবা সফলতা কিছুই পায় নি, যেটা পেয়েছে সেটা হচ্ছে ধিক্কার। কেননা, আইনস্টাইন বলেছিলেন, "সমাজ কিংবা পরিবেশ খারাপ লোকের খারাপ কাজের জন্য নষ্ট হয় না, নষ্ট হয় ভালো মানুষের নীরবতার কারনে"। 

 
 
 
পাবনা নিউজ২৪.কম
থানাপাড়া (হেলেন কটেজ), পাবনা-৬৬০০
ই-মেইলঃ newsroom@pabnanews24.com