১৭ আষাঢ় ১৪৩১
 

সর্বশেষ

প্রকৃতিপ্রেমী বৃক্ষমাতা পাবনা শহরের শালগাড়িয়ার আলেয়া পারভীন

Dec 3, 2013, 3:16:45 PM

প্রকৃতিপ্রেমী বৃক্ষমাতা পাবনা শহরের শালগাড়িয়ার আলেয়া পারভীন

আহমেদ উল হক রানা,:‘সন্তানদের প্রতি মায়ের যেমন অপরিসীম মায়া থাকে, তেমনি গাছের প্রতিও আমার মায়া। এই গাছগুলো আমার সন্তানের মতো। আমি মাঝেমধ্যে গাছগুলোকে আমার সন্তানের নাম ধরে ডাকি। এ জন্য আমার বাড়ির ছাদ, বারান্দা, আঙিনা, এমনকি খাবার-শোবার ঘরে আমি গাছ রেখেছি। ৩০ বছর ধরে গাছগুলো লালন-পালন করছি।’

পাবনা শহরের শালগাড়িয়া হাসপাতাল রোডে ‘নয়ন হাউজ’। এই বাড়ির গৃহবধূ আলেয়া পারভীন (৫৫)। বাড়িটির নিচতলা থেকে শুরু করে ছাদ পর্যন্ত শত শত গাছ। গাছগুলো দেখিয়ে দেখিয়ে এভাবেই বলছিলেন আলেয়া পারভীন। তিনি নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন তাঁর স্বপ্নের বাগান। স্বামী আবদুল করিম সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী। স্বামীর অনুপ্রেরণায় আর বৃক্ষের প্রতি অগাধ ভালোবাসায় ৩০ বছর ধরে গড়ে তুলেছেন বনসাই ও দেশি-বিদেশি ফল-ফুলের বাগান।
সরেজমিনে আলেয়া পারভীনের বাগান ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির বারান্দা, শোবার ঘর, আঙিনা, ছাদ সবখানে নানা জাতের ফলদ ও বনজ গাছ। দেখে মনে হবে কোনো নার্সারি, কিন্তু তা নয়। আলেয়া পারভীন পরম মমতায় গাছগুলো আগলে রেখেছেন কেবল বৃক্ষের প্রতি ভালোবাসা থেকে। বাড়ির ছাদে যত্ন আর পরিচর্যায় একসঙ্গে বড় হচ্ছে বট, পাকুড়, অর্জুন, হিজলের সঙ্গে খেজুর, মালটা, জামরুল, পেয়ারা, আম, আমড়া, বাউকুলসহ দুই শতাধিক গাছ। শুধু এগুলোই নয়, ছাদের ওপর একই সঙ্গে ছোট-বড় টবে শোভা পাচ্ছে শাপলা, পানিফলসহ নানা জাতের দেশি-বিদেশি ফুলের গাছ। ব্যতিক্রমী এই বাগান গড়ে তুলেছেন গৃহবধূ আলেয়া পারভীন। 
এ বিষয়ে আলেয়া পারভীন জানান, ১৯৮৪ সালে ঢাকায় একটি বৃক্ষমেলায় বটগাছের একটি বনসাই দেখে মুগ্ধ হন তিনি। কেনার আগ্রহ প্রকাশ করলে বিক্রেতা দাম হাঁকেন লাখ টাকা। সাধ্যে কুলায়নি বলে বনসাইটি কিনতে পারেননি তিনি। ওই মেলা থেকে বনসাইয়ের প্রতি প্রবল আগ্রহ জšে§ তাঁর। এরপর তিনি বনসাই সম্পর্কে জানার জন্য লেখাপড়া শুরু করেন। অভিজ্ঞজনদের পরামর্শ নেন। ওই বছরের শেষ দিকে বনসাই তৈরিতে নিজেকে নিয়োজিত করেন। স্ত্রীর আগ্রহ দেখে এগিয়ে আসেন স্বামী আবদুল করিম। চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে হতো তাঁকে। সেসব স্থান থেকে টব, গাছের চারা আর আনুষঙ্গিক সব কিছু এনে দিতেন তিনি। এরপর ধীরে ধীরে বাড়ির ছাদে গড়ে ওঠে বাগান। পরে বাগানে যোগ হতে থাকে দেশি-বিদেশি ফলদ, বনজ আর ঔষধি গাছ। স্বপ্নের বাগান গড়তে গিয়ে গাছের সঙ্গে গভীর মমতায় জড়িয়ে পড়েন আলেয়া পারভীন। গাছের প্রতি মমতায় নিজেকে পরিচিত করতে সক্ষম হয়েছেন সফল নারী বৃক্ষমাতা হিসেবে।
আলেয়া পারভীনের স্বপ্নের বাগান ঘুরে দেখা যায়, সেখানে বট, পাকুড়, সরাগাছ, তেঁতুল, অর্জুন, হিজল, সাইকাস, শিমুলসহ নানা গাছের বনসাই রয়েছে। রয়েছে সৌদি আরবের খেজুর, স্ট্রবেরি, মালটা, চেরি, বাউকুল, আম, পেয়ারা, আমড়া, জামরুল, কতবেল, টক আর মিষ্টি করমচা গাছ। এসব গাছ টবে থাকলেও ফল ধরেছে সব গাছেই। আছে গোলাপ, জবাসহ কয়েক রকমের ফুল আর পাতাবাহার। ছাদের এক পাত্রে ছোট-বড় টবে রাখা আছে ১৪ থেকে ১৫ ধরনের ক্যাকটাস। আর একেবারে কোনায় বড় দুটি বিশেষ টবে বড় হচ্ছে লাল শাপলা আর পানিফল গাছ। এক কথায় ডাঙা আর পানির গাছগুলো উঠে এসেছে আলেয়া পারভীনের ছাদের বাগানে। 
নিজের বাগানে দাঁড়িয়ে আলেয়া পারভীন বলেন, বর্তমান যান্ত্রিক সময়ে জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। সেখানে গড়ে উঠছে বড় বড় অট্টালিকা আর শিল্প-কলকারখানা। আবাদি জমি কমে যাওয়ায় কৃষিপণ্য আবাদের পাশাপাশি নার্সারি বা বাগান করাও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। হারিয়ে যাচ্ছে অনেক দেশীয় প্রজাতির ফলদ আর বনজ গাছ। এ কারণে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম পর্যায়ে তিনি ছোট পরিসরে ছাদে বাগান গড়ে তোলেন। বাগানের গাছগুলো ঠিকমতো বড় হওয়ায় ধীরে ধীরে তিনি বাগানের পরিধি বাড়াতে উদ্যোগী হন। আর এখান থেকে সফলও হয়েছেন তিনি। দেশীয় প্রজাতির ফলদ আর বনজ গাছ সংরক্ষণের পাশাপাশি তিনি খাল, বিল আর পুকুরে থাকা শাপলা-পানিফলের আবাদ করে সফল হয়েছেন। ছাদে বাগান করে সফল হওয়ার পাশাপাশি তিনি এখন বনসাই আর ক্যাকটাস বাণিজ্যিকভাবে আবাদ আর বাজারজাতকরণের চিন্তাভাবনা করছেন।
আলেয়া আরো জানান, সাধারণ বাগানের মতো করে ছাদে বাগান করার ক্ষেত্রে টব ছাড়া আর কোনো বাড়তি খরচ তেমন পড়ে না। বনসাই আর ক্যাকটাসে কখনো কখনো ফাঙ্গাসের আক্রমণ হলেও সাধারণ কীটনাশকেই তা নির্মূল করা যায়। তবে ছাদে বাগান করতে নিবিড় পরিচর্যা, ধৈর্য আর একগ্রতা অবশ্যই প্রয়োজন।
আলেয়া পারভীন মনে করেন, যাঁদের বসতবাড়ির ছাদে বাগান করার সুযোগ আছে তাঁরা যদি নিজেদের ছাদে এমন বাগান গড়ে তোলেন, তাহলে তা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অবদান রাখার পাশাপাশি বিলুপ্তপ্রায় অনেক দেশীয় ফলদ-বনজ গাছ সংরক্ষণে সহায়ক হবে। 

 
 
 
পাবনা নিউজ২৪.কম
থানাপাড়া (হেলেন কটেজ), পাবনা-৬৬০০
ই-মেইলঃ newsroom@pabnanews24.com