১৭ আষাঢ় ১৪৩১
 

সর্বশেষ

বিনাচাষে রসুন আবাদে ভাগ্য বদলেছে নৌকার মাঝি ভূমিহীন রাজেন আলীর

Dec 20, 2013, 1:12:38 AM

বিনাচাষে রসুন আবাদে ভাগ্য বদলেছে   নৌকার মাঝি ভূমিহীন রাজেন আলীর

কাজী বাবলাা: বিনাচাষে রসুন আবাদ করে ভাগ্য বদলেছে নৌকার মাঝি ভূমিহীন রাজেন আলীর। ৫ বছর আগে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে রসুন আবাদ শুরু করে তিনি এখন ৪ লাখ টাকার জমির মালিক। সংসারে এনেছেন সুখ-শান্তি। 

পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলায় বিনাচাষে রসুনের আবাদ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কোন রকম হালচাষ ছাড়াই রসুন রোপন করে ফলনও বেশ ভাল পাওয়া যায় বলে কৃষকরা জানান। এখন চলছে রসুন রোপনের ভরা মৌসুম। নারী-পুরুষ মিলে জমিতে লাইন ধরে বসে রসুনের কোয়া রোপন করছেন।

চাটমোহরের ছাইকোলা পশ্চিমপাড়া গ্রামের রাজেন আলী এক সময় অন্যের নৌকায় মাঝির কাজ করতেন দিন মজুরিতে। রাজেন মাঝি বলেন, তখন ৫ ছেলে-মেয়ে নিয়ে অভাবের শেষ ছিলো না। নিজের কোনো জমি ছিলো না। ৫ বছর আগে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বিনাচাষে রসুন আবাদ শুরু করি। তিনি বলেন, রসুন আমার সংসার বদলায়ে দিয়েছে। রাজেন মাঝির বাড়ীতে এখন ৩ টা টিনের ঘর। ৪ লাখ টাকার জমি কিনেছেন মাঠে। আর তাকে নৌাকা চালাতে হয় না। তার মতো শতাধিক ভুমিহীন দিন মজুর এই এলাকায় বড় কৃষকের জমি বর্গা নিয়ে রসুন চাষ করে ভাগ্য বদলে নিয়েছেন। 

চাটমোহর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদের লমাত্রা ধরা হয়েছে। ছাইকোলা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোকসেদ আলী জানান, কৃষকরা নিজেরাই বীজ সংরন করে প্রতিবছর এভাবেই রসুন আবাদ করছে। 

উপজেলার দনিপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান সরকার জানান, এবার বীজ, শ্রমিক, সার, কীটনাশক, সেচসহ মোট খরচ হবে বিঘায় প্রায় ২১ হাজার টাকা। আর বিঘা প্রতি রসুন উৎপাদন হবে প্রায় ১৫ মন। তিনি জানান, অনেক কৃষকই এখন রসুনের ভেতর সাথী ফসল হিসাবে বাঙ্গি চাষ করছেন। এতে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। এখনই রসুন রোপনের উপযুক্ত সময়। কারন বিলের পানি কার্তিকের শেষে নদীতে নেমে যায়। অগ্রহায়নের শুরুতে বিলের পলিমাটি শুকিয়ে ওঠে। তখন কৃষক কোন রকম হালচাষ ছাড়াই রসুন রোপন করেন। ২০০০ সাল থেকে এই গ্রামে প্রথম বিনাচাষে রসুন আবাদ শুরু হয়।

আবাদী ও স্থানীয় কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, কার্তিক মাসের শেষে যখন বিল থেকে বন্যার পনি নেমে যায়, শেষ হয় বোনা আমন ধান কাটা। তখন, পলি জমা কাদা মাটিতে বিনা চাষে সারিবদ্ধ ভাবে রসুনের কোয়া রোপন করা হয়। রোপন শেষে জমিতে ধানের নাড়া (খড়) বিছিয়ে দেওয়া হয়। এরও আগে জমিতে প্রতি বিঘা ২৫/৩০ কেজি টিএসপি, ২৫ কেজি পটাশ, ২০ কেজি জিপশাম ও ২ কেজি বোরন সার প্রয়োগ করা হয়। রোপনের ২৫/৩০ দিন পর বিঘা প্রতি ১৫/২০ কেজি ইউরিয়া সার দিয়ে পানি সেচ দেওয়া হয়। ৫০ দিন পর আবার দ্বিতীয় দফা ১২/১৫ কেজি ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করা হয়। রোপনের ৯৫/১০০ দিন পর ফাল্গুন মাসের ১৫ তারিখ থেকে চৈত্র মাস পুরো চলে রসুন উত্তোলনের কাজ। রসুন মাঠ থেকে তুলে এনে উঠোনে বা খোলায় চড়া রোদে শুকোনো হয়। তারপর কৃষক রসুন গাছ সমেত ঝুটি বা বিনী বেঁধে ঘরে সংরন করেন। 

চাটমোহর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অফিসার রওশন আলম জানান, মূলতঃ বর্ষার সময় বোনা আমন ধান আবাদ হয় ওই সব জমিতে। ধান কাটার পর এক সময় এ জমিতে কৃষক গম, মশুর, খেশারি, সরিষা জাতীয় রবিশষ্য চাষ করতো। কিন্তু এসব ফসল উৎপাদন কম হওয়ায় এবং লাভের পরিমান কমে যাওয়ায় কৃষক রসুন চাষের দিকে ঝুকে পড়ে। 

লাভ-তিঃ-একবিঘা রসুন চাষে খরচ হয় (১) বীজ ১০০ কেজি ৬ হাজার টাকা, (২)সার (ইউরিয়া, টিএসপি, পটাশ, জিপশাম ও বোরন) সব রকম মিলিয়ে ৩ হাজার, (৩) শ্রমিক ৬ হাজার, (৪) সেচ ২ হাজার, (৫) নাড়া(খড়) ১ হাজার টাকা। মোট খরচ প্রতি বিঘায় ২১ হাজার টাকা। রসুন বর্তমানে বিঘায় উৎপাদন হচ্ছে গড়ে ১৪/১৫ মন। সে হিসেবে প্রতি মন বর্তমান মূল্য ২ হাজার টাকা ধরে মূল্য দাঁড়ায় ৩০ হাজার টাকা। খরচ বাদে নিট লাভ প্রতি বিঘাতেই ১২ হাজার টাকা।

ছাইকোলা পশ্চিমপাড়া গ্রামের রাজেন আলী এক সময় অন্যের নৌকায় মাঝির কাজ করতেন দিন মজুরিতে। রাজেন মাঝি বলেন, তখন ৫ ছেলে-মেয়ে নিয়ে অভাবের শেষ ছিলো না। নিজের কোনো জমি ছিলো না। ৫ বছর আগে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে এই রসুন আবাদ শুরু করি। তিনি বলেন, রসুন অ্যাসে আমার সুংসার বদলায়ে দিছে। রাজেন মাঝির বাড়ীতে এখন ৩ টা টিনের ঘর। ৪ লাখ টাকার জমি কিনেছেন মাঠে। আর তাকে নৌাকা চালাতে হয় না। তার মতো শতাধিক ভুমিহীন দিন মজুর এই এলাকায় বড় কৃষকের জমি বর্গা নিয়ে রসুন চাষ করে ভাগ্য বদলে নিয়েছেন। অবশ্য রসুনের দাম না থাকায় এখন সেই ভাগ্য বদলের ধারা থেমে গেছে।

 

 
 
 
পাবনা নিউজ২৪.কম
থানাপাড়া (হেলেন কটেজ), পাবনা-৬৬০০
ই-মেইলঃ newsroom@pabnanews24.com