১৭ আষাঢ় ১৪৩১
 

সর্বশেষ

সোনার খোঁজে নর্দমায় !

Dec 22, 2013, 11:33:30 PM

সোনার খোঁজে নর্দমায় !

আবদুল মান্নান পলাশ : সোনা বলে কথা। সে সোনা যেখানেই থাক। স্বর্ণশিল্পীদের ব্যবহৃত শৌচাগার কিংবা দুর্গন্ধময় নর্দমা। সোনার খোঁজে ওরা সেখানেই হাত চালায়। পঁচা কালো দুর্গন্ধময় আবর্জনার মধ্যে ওরা সোনা-রূপা খুঁজে ফেরে। স্বর্ণকাররা ওদের ‘সোনা টোকাই’ বলে থাকে। এক জীবনে ওরা টোকাই ছিলো। কাগজ টোকাতো। এখন সোনা-রূপা টুকিয়ে জীবন চলে। ওদের স্থায়ী ঠিকানা নেই, নেই পরিচয়। নেই আর সবার মতো জন্মবৃত্তান্ত। ওরা পথ শিশু ছিলো। বড় হয়ে, হয়ে গেছে সোনা টোকাই। 

একজনের সাথে দেখা হলো চাটমোহর পৌর সদরের দোলবেদীতলা সোনাপোর্টিতে। নাম পাভেল। বয়স ১৫/১৬। পঁচা আবর্জনাময় নর্দমায় হাত ডুবিয়ে সোনার খোঁজে থাকলেও ওর মুখটায় দেখলাম এক হিরন্ময় হাসি। কথা বলতে চাইলে, হাসিটা একটু উসকে দিয়ে বললো, বলেন ভাইয়া। অবাক হলাম বিনম্রতায়। 

নর্দমার টাটকা দুর্গন্ধ এড়িয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে কথা হলো পাভেলের সাথে। সে তখন রায় জুয়েলার্সের সামনের নর্দমায় নেমে পঁচা কাদা সমেত আবর্জনা তুলছিলো একটি বিশেষ পাত্রে। পাভেল জানালো, সে থাকে খুলনায়। স্থায়ী কোন ঠিকানা নেই। বললো, যখন যেখানে ভালো লাগে সেখানেই থাকি। তবে অবশ্যই বড় কোন শহরে।

সে আরো জানায়, সোনার দোকানের সামনের নর্দমার ময়লা, রাস্তার ধুলো এবং স্বর্ণশিল্পীদের ব্যবহৃত শৌচাগার পরিস্কার করা আবর্জনা তারা সংগ্রহ করে। সেগুলো একটি বিশেষ পাত্রে তুলে নিয়ে নদী/পুকুরে ধুয়ে পরিস্কার করে সোনা-রূপার গুড়ো বের করে। এরপর ‘সাগর সেচা মানিক’ আলাদা করে মহাজনের কাছে বিক্রি করে। 

পাভেল জানায়, এতে ১ থেকে ২ হাজার টাকার সোনা-রূপা পাওয়া যায়। সেগুলো সানার দোকানের ছাই কেনা মহাজনের কাছে বিক্রি করা হয়।

পাভেল জানায়, তার কোথাও কেউ নেই। আগে কাগজ ও পলিথিন টোকাতো শহরে শহরে। একজনের কাছ থেকে শিখে এ কাজে নেমেছে সে। প্রায় ৩ বছর হয়ে গেলো এ পথে। মাসে ৪/৫ বার কাজটা করতে হয়, তাতেই তার নাকি ভালোই চলে যায়। জানতে চাইলে সোনার দোকানের ছাই কেনা মহাজন মানিকগঞ্জের ইরফান আলী জানান, আমরা ছাই কিনে পানিতে ধুয়ে ধুয়ে সোনা-রূপা বের করে বিক্রি করি। ওদের আমরা সুইপার বলে থাকি। ওরা আমাদের কাছে সংগ্রহ করা সোনা-রূপার গুড়ো বিক্রি করে। 

রায় জুয়েলার্সের মালিক রনি রায় জানান, ভাগ্য দোষে ওরা এ কাজ করে জীবন বাঁচায়। এটা না করে ওরা চুরি-ডাকাতিও তো করতে পারতো। সে দিক থেকে ওরা ভালো। একটা জীবিকার পথ বের করে নিয়েছে। করছে জীবন-সংগ্রাম। আমি ওদের স্যালুট করি।  

 
 
 
পাবনা নিউজ২৪.কম
থানাপাড়া (হেলেন কটেজ), পাবনা-৬৬০০
ই-মেইলঃ newsroom@pabnanews24.com