১৭ আষাঢ় ১৪৩১
 

সর্বশেষ

আটঘরিয়ায় ক্ষতিকর কেমিক্যাল, চিনি ও আখের গুড় মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে খেজুরের গুড়

Dec 28, 2013, 11:10:09 AM

আটঘরিয়ায় ক্ষতিকর কেমিক্যাল, চিনি ও আখের গুড় মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে খেজুরের গুড়

মো.জিল্লুর রহমান রানা : শীতের মৌসুমে বাঙ্গালীর রসনাতৃপ্তির সুগন্ধি খেজুরের গুড় তৈরি হচ্ছে ক্ষতিকর কেমিক্যাল, চিনি ও আখের গুড় মিশিয়ে। বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে এধরনের ভেজাল খেজুরের গুড়। এতে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতা সাধারণ। আটঘরিয়া উপজেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে সুগন্ধি খেজুরের গুড়। ব্যাপক হারে খেজুর গাছ কেটে ফেলায় আসল খেজুরের রস পাওযা দুসাধ্য হয়ে পড়েছে। বাজারে খেজুরের গুড়ের চেয়ে চিনি ও আখের গুড়ের দাম কম হওয়ায় ওই চিনি ও আখের গুড় মিশিয়ে ভেজাল খেজুড়ের গুড় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কেমিক্যাল মিশিয়ে সুগন্ধি খেজুর গুড় তৈরি করেও বাজারে বিক্রি করে ক্রেতাদের প্রতারিত করা হচ্ছে। আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা বাজারের খেজুরগুড় ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম জানান, এক সময় বাজারে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মণ গুড় নিজেই বিক্রি করতাম। দিনে দিনে যেভাবে খেজুর গাছ নিধন হচ্ছে, এতে এখন সারা বাজার মিলিয়ে দু’চার মণ খেজুর গুড় সংগ্রহ করা যায় না। এছাড়া গুড় উৎপাদনের সাথে জড়িত গাছীরা তাদের প্রকৃত পেশা পরিবর্তন করে গুড় তৈরীর ক্ষেত্রে ক্ষতিকর কেমিক্যালসহ কমদামে বাজারে পাওয়া চিনি ও আখের গুড় মিশিয়ে সুগন্ধি খেজুরের গুড় তৈরী করে বাজারে নিয়ে আসে। এতে সাধারণ ক্রেতারা প্রতারিত হয় বিধায় এপেশা ছেড়ে দিয়েছি। নানা সমস্যা ও প্রতিকূলতার ফলে পাবনা জেলার খেজুরের গুড়ের ঐতিহ্য বিলীন হতে চলেছে। নির্বিচারে খেজুরগাছ নিধন, নতুন করে খেজুরগাছ রোপন না করা ও খেজুর গুড়ের চেয়ে চিনি ও আখের গুড়ের মূল্য কম থাকায় ঐতিহ্যবাহী এ গুড় হারিয়ে যেতে বসেছে। শীতের পিঠা-পায়েস তৈরি ও অতিথি আপ্যায়নের জন্য খেজুর গুড় ছিল অপরিহার্য উপাদান। এ গুড় উৎপাদন ও বিপননের সাথে বিভিন্ন পেশার কয়েকটি সম্প্রদায় সম্পৃক্ত ছিল। এর মধ্যে রয়েছে গাছী, কুমার, কামার, বাঁশ শিল্পী, আড়তদার ও পাইকার। এরা সবাই আজ পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় নিয়োজিত হলেও তেমন একটা সুবিধা করতে পারছেন না। এদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্দিন আতিক্রম করছেন খেজুরগুড় উৎপাদনের সাথে জড়িত গাছীরা। এক সময় জেলায় নদী তীর ও খাল পাড়ে, প্রধান সড়কের দুই ধারে খেজুর গাছের ব্যাপক চাষ হতো। এখন খেজুর গাছ কেটে রোপন করা হচ্ছে, রেইনট্রি, চাম্বল, আকাশমনি ও মেহগনির মতো বনজ গাছ। ফলে গাছীদের রস উৎপাদনের জন্য প্রধান উপাদান খেজুর গাছ কালের আবর্তে বিলুপ্ত হতে চলেছে। উপজেলার ধলেশ্বও গ্রাামের গাছী অসিম উদ্দিন জানান, আজ থেকে ৫/৬ বছর আগেও গ্রামে শত শত খেজুর গাছ ছিল। শীত মৌসুমে প্রতিদিন পালা করে দু’শতাধিক খেজুর গাছের রস আহরণ করেছি। এথেকে দুই থেকে আড়াই মণ গুড় উৎপাদন হতো। যা বিক্রি করে স্বাচ্ছন্দে সংসার চালাতে পারতাম। আজ তা শুধুই স্মৃতি। ইট ভাটার জ্বালানীর জন্য নির্বিচারে খেজুর গাছ কেটে বিক্রি করে দেয়ায় এখন আর সারা গ্রাম ২০ থেকে ৩০ টির বেশী খেজুর গাছ মিলানো যাবে না। তাই বাধ্য হয়েই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছি। একই উপজেলার দেবোত্তর ইউনিয়নের কয়রাবাড়ী গ্রামের হাশেম আলী,জুমাইখিরি  গ্রামের আয়নাল হোসেন বলেন, গাছের মালিকরা দেশীয় খেজুর গাছ বিক্রি করে দ্রুত বর্ধনশীল কাঠের গাছ রোপন করছেন। এতে গুড় উৎপাদনের জন্য খেজুর গাছ না পেয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছি। এখন এলাকায় খেজুরের রস পাওয়াই দুষ্কর। আটঘরিয়া উপজেলার কয়রাবাড়ী সখিনা খাতুন বলেন, ‘শীতের সময় বাড়ির ছেলেরা খেজুর বাগান থেকে সন্ধ্যা রাতে গোপনে রস এনে পাযেস তৈরী করতো। সকাল বেলা রস কম পেয়ে গাছীরা বকাবকি করতো। এখন এটি শুধুই কল্পকাহিনী মাত্র। নাতি-পুতিদের জন্য সন্ধ্যায় রস দুরে থাক, সকালের খেজুরের রস দেখাতে হলেও তাদের হাট-বাজারে যেতে হয়। খেজুর গাছের জন্যই বিভিন্ন এলাকার নাম খেজুরতলা, খেজুরবাগান, রসেরমোড় ইত্যাদি নামে নাম করন করা হয়েছিল’। আটঘরিয়া পৌর এলাকার নয়ন শেখ বলেন, মেয়ে-জামাই বিদেশ থেকে বেড়াতে এসেছে। তারা খেজুর গুড়ের পায়েস খাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। গত দু’ দিন আগে বাজার থেকে খেজুর গুড় কিনে পায়েস রান্না করার পরে দুধ ও পায়েস নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের সামনে এতটুকু পায়েস দিতে পারিনি। সদর উপজেলার ভজেন্দ্রপুর গ্রামের খেজুর গাছী নজু মিয়া বলেন, আগের মতো এখন আর গাছে রস হয় না। তাছাড়া গুড় তৈরী করতে ১শ২০ টাকা খরচ হয়। বাজারে দেড়শ টাকা কেজি দাম চাইলে কেউ গুড় কিনতে চান না। তাই বাধ্য হয়ে ৫০ টাকা দামের কিছু চিনি মিশিয়ে পরতা মিলিয়ে নেই। ফলে আর লোকশান গুনতে হয়না। পাবনা জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য জেলা বাসীর একটু আন্তরিকতাই যথেষ্ট। অবাধে খেজুরগাছ কর্তন বন্ধের পাশাপাশি নদী-খাল, পুকুরপাড় ও সড়কের দু’ধারে নতুন করে খেজুর গাছের চারা রোপন করা হলে এলাকার জলবায়ু ও আবহাওয়ায় খেজুরগাছ বিনা পরিশ্রমে দ্রুত বেড়ে উঠে। একটি খেজুরগাছ থেকে ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যেই রস সংগ্রহ করা যায়। 

 
 
 
পাবনা নিউজ২৪.কম
থানাপাড়া (হেলেন কটেজ), পাবনা-৬৬০০
ই-মেইলঃ newsroom@pabnanews24.com