১৭ আষাঢ় ১৪৩১
 

সর্বশেষ

ঈশ্বরদীর সাহারা খাতুন ফলের বাগান করে সফল

Dec 29, 2013, 10:58:32 PM

ঈশ্বরদীর সাহারা খাতুন ফলের বাগান করে সফল

সেলিম আহমেদ: গ্রাম্য বধু সাহারা খাতুন অভাবের সাথে লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে সবজি চাষ ও ফলের বাগান করে আজ তিনি সফল একজন নারী চাষি। বাড়ির মধ্যে যার নিরিবিলি জীবন-যাপন করার কথা-তিনি আজ রীতিমত একজন সমাজ উন্নয়ন কর্মীর দায়িত্ব পালন করছেন। বসত বাড়ির আশপাশে সবজি চাষ এবং ফলের বাগান করে অভারের সংসারে আলোর মুখ দেখিয়েছেন। সবজি ও ফলের বাগান করে এলাকাবাসীকে সবজি ও ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করেছেন সাহারা। সেবাদানকারী সমিতির ক্ষুদ্রদলের গ্রাম উন্নয়ন কমিটির দায়িত্বে থাকা সাহারা খাতুনের স্বামী সোহরাব আলী সরদার স্থানীয় বড়ইচরা হাটে খিলিপানের দোকানী ছিলেন। আট সন্তানের জনক-জননী সাহারা ও সোহরাব সরদার।  

সাহারা খাতুন জানান, অভাবের সংসার হওয়াতে স্বামী দোকানে চলে গেলে বসতবাড়ির আশপাশে শাক-সবজির চাষ ও ফলের বাগান গড়ে তোলেন তিনি। এর পর আর থেমে থাকেনি সাহারা খাতুন। পুঁইশাক, লালশাক, বেগুন, গোল আলু, কাঁচামরিচ, রসুন, পেঁয়াজ এবং লিচু, পেয়ারা, পেঁপে ও কূলের গাছ রোপন করেন। যা কিছু তিনি বাড়ির আঙ্গিনায় চাষ করেন তা দিয়েই সারা বছরের সবজি ও ফলের চাহিদা মিটে যায়। এমনকি বাড়তি কিছু আয়ও  হতে থাকে। 
২০১০ সালে ঈশ্বরদী উপজেলা সেবাদানকারী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সামসুল আলম মধু লোকাল সার্ভিস প্রোভাইডার হটিকালচার (এলএসপি)’র মাধ্যমে সঠিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ ও ফল বাগান গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ নেন। সমিতি গঠনের আগে বিচ্ছিন্ন ভাবে তিনি সবজি ও ফল চাষ করতেন। তখন এসব চাষ করে তেমন একটা লাভ হতোনা। বর্তমানে সমিতি গঠনের পর থেকে এলএসপিদের পরামর্শে সবজি ও ফল চাষ করে আয় বেশ ভালোই হচ্ছে।
সাহারা খাতুন বলেন, একমাত্র স্বামীর রোজগারের টাকায় এতো বড় সংসার চালানো মুশকিল ছিল। দশজনার সংসারে অনেক সময় সকলের মুখে খাবার তুলে দেওয়াই সম্ভব হতোনা। বড় মাছ, মাংস মাসে একদিন খাওয়াই মুশকিল হয়ে পড়েছিল। নিজে না খেয়ে ছেলে-মেয়েদের তিনি খাওয়াতেন। তিনি আরও বলেন, নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সবজি ও ফলের চাষ করে ছেলে-মেয়েদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছেন। এখন আমরা এক সাথে দুজনই আয় করছি। ঘরের গৃহীনি থেকে লায়লাতুল ফেরদৌস এখন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা ও নারী কৃষক। 
ঈশ্বরদী উপজেলা সেবাদানকারী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সামসুল আলম মধু হটিকালচার (এলএসপি) জানান, সেবাদানকারী সমিতির ঈশ্বরদী (এসপিএ) থেকে ২০ জন নারী সদস্যকে সবজি চাষ ও ফলের বাগান তৈরীতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। সেই সঙ্গে জমি নির্বাচন, ফল গাছের জাত নির্বাচন, পরিচর্যা ও সার এবং কীটনাষক প্রয়োগের নিয়ম কানুনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন লোকাল সার্ভিস প্রোভাইডাররা। 
এসডিসি সমৃদ্ধি প্রকল্প রাজশাহী অঞ্চল হেলভেটাস সুইস ইন্টারকোঅপারেশন এর সহযোগী সমন্বকারী নুরুল ইসলাম সাহারা খাতুনের সবজি চাষ এবং ফলের বাগান পরিদর্শনে এসে বলেন, আমাদের প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষের স্থায়িত্বশীল জীবন মানের উন্নয়নে অবদান রাখা। ঈশ্বরদী উপজেলায় এসপিএ-এর মাধ্যমে গ্রামীণ দরিদ্র ও অতিদরিদ্র কৃষকের দোরগোড়ায় কৃষি সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সৃমদ্ধি প্রকল্প। বর্তমানে এসব সংগঠন সমূহের উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় গন্ডি পেরিয়ে আঞ্চলিক এবং জাতীয় পর্যায়ের বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করছে। ঈশ্বরদীর সাহারা খাতুন সঠিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ ও ফলের বাগান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার দেখা দেখি ওই এলাকার অনেক নারী এখন সবজি চাষ ও ফল উৎপাদন  করে স্বচ্ছল হয়েছেন। 

 
 
 
পাবনা নিউজ২৪.কম
থানাপাড়া (হেলেন কটেজ), পাবনা-৬৬০০
ই-মেইলঃ newsroom@pabnanews24.com