১৭ আষাঢ় ১৪৩১
 

সর্বশেষ

ঈশ্বরদীতে ৪’শ আদিবাসী পরিবারের ‘কু্যঁচি মাছ’ ধরে জীবিকা নির্বাহ

Jan 5, 2014, 12:21:01 PM

ঈশ্বরদীতে ৪’শ আদিবাসী পরিবারের ‘কু্যঁচি মাছ’ ধরে জীবিকা নির্বাহ

সেলিম আহমেদ: আদিবাসী হওয়ার কারণে অন্য কোন কাজের সুযোগ না পাওয়ায় শুধুমাত্র জীবন-জীবিকার তাগিদে ‘ক্ু্যঁচি’ মাছ (কু্যঁচি সাপ বলে পরিচিত) ধরে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে ঈশ্বরদীর প্রায় ৫ শতাধিক আদিবাসী পরিবার। অত্যান্ত কষ্টদায়ক এ কাজ করে কোন মতো পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে আছেন তারা। আদিবাসীদের ধরা এই কু্যঁচি মাছকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলিতে গড়ে উঠেছে ‘কু্যঁচি মাছের আড়ৎ’। সেখান থেকেই সপ্তাহে দুই দিন ৪/৫’শ কেজি ‘কু্যঁচি মাছ’ বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সরেজমিন ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আদিবাসীদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
আদিবাসীরা জানান, বছরের নভেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত কু্যঁচি মাছ ধরার মৌসুম। তবে এপ্রিল মাসে খাল-বিল-ডোবা-নালায় বেশি পরিমানে কু্যঁচি মাছ পাওয়া যায় বলে জানান তারা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই কু্যঁচি মাছ ধরা হয়। প্রতিদিন একজন গড়ে ২/৩ কেজি করে কু্যঁচি মাছ ধরতে পারেন। আদিবাসী শম্ভু বিশ্বাস জানান, পুকুর অথবা বিলের পাশের ছোট ছোট গর্ত চিহ্নিত করে মোটা সুতার সাথে বড়শি বেঁধে তার সাথে কেঁচো অথবা ছোট ব্যাঙ লাগিয়ে ওই গর্তের মধ্যে ফেলে একটু নাড়া দিলেই কু্যঁচি মাছ বড়শিতে আটকে যায়। তারা জানান, ডোবা নালায় টাকি মাছ ধরার মতো করেই কু্যঁচি মাছ ধরা হয়। 
স্থানীয় ভাবে প্রতি কেজি কু্যঁচি মাছ বিক্রি হয় ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। মুলাডুলি রেলগেট এলাকায় এই কু্যঁচি মাছ কেনা বেচার জন্য একটি আড়ৎ গড়ে উঠেছে। ঈশ্বরদী উপজেলার সকল কু্যঁচি মাছ ক্রয়-বিক্রয় মূলতঃ ওই আড়ত থেকেই হয়। 
আড়তদার সাহাববুদ্দিন শেখ জানান, এই কু্যঁচি মাছ প্রথমে ঢাকায় এবং পরে সেখান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হয়। ঈশ্বরদীর এই কু্যঁচি মাছ চীন, হংকংসহ প্রায় ১৫টি দেশে রপ্তানী হয় বলে জানান তিনি।
কু্যঁচি মাছ সংগ্রহকারী আদিবাসী শম্ভু বিশ্বাস, বাবু বিশ্বাস, আলবর বিশ্বাসসহ অনেকেই সাংবাদিকদের জানান, প্রথমে এই কু্যঁচি মাছ ধরতে চরম ভয় লাগতো। কিন্তু জীবিকার তাগিদে সকল ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে আমরা কু্যঁচি মাছ ধরি, এখন আর ভয় লাগেনা। আদিবাসী রুবেল বিশ্বাস, মহন বিশ্বাস ও পলাশ বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, শুধুমাত্র আদিবাসী হওয়ার কারণে সম্মানজনক কোন পেশায় তারা কাজ করার সুযোগ পাননা। তাই বাধ্য হয়েই জীবন বাঁচানোর তাগিদে এই পেশা বেছে নিয়েছেন তারা। ঈশ্বরদী উপজেলার পতিরাজপুর, মাড়মী, ফরিদপুর, সরইকান্দী, গোপালপুরসহ পাশ্ববর্তী খিদিরপুর, রাজাপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমানে এই কু্যঁচি মাছ ধরা হয়। মুলাডুলির আড়তদার আশরাফ হোসেন ও সুভাষ রায় জানান, ঈশ্বরদীতে গত ৭/৮ বছর ধরে এই কু্যঁচি মাছ ধরা এবং এখান থেকে ঢাকা হয়ে বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হচ্ছে। তারা আরও জানান, ঈশ্বরদীর বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১০জন পাইকার রয়েছেন যারা আদিবাসীদের থেকে এই কু্যঁচি মাছ কিনে রপ্তানী করে থাকেন।পরিবেশকর্মী কাজী রকিব উদ্দিন জানান, সাধারনতঃ কু্যঁচি মাছ নোংরা আবর্জনাসহ অন্যান্য মাছের জন্য ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ খেয়ে পানি পরিস্কার রাখতে সহায়তা করে, ফলে এই বিপন্ন প্রজাতির মাছটি ব্যাপক ভাবে ধরা হলে পরিবেশের ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্থ হবে।    এবিষয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা মৎস্য অফিসার মনিরুল ইসলাম জানান, ক্যুঁচি মাছ ধরতে সরকারি কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে ব্যাপক ভাবে এই মাছ ধরা হলে বিপন্ন প্রায় এই মাছটি হয়তো এক সময় হারিয়ে যাবে। একই সঙ্গে পরিবেশরও ক্ষতি হবে। 

 
 
 
পাবনা নিউজ২৪.কম
থানাপাড়া (হেলেন কটেজ), পাবনা-৬৬০০
ই-মেইলঃ newsroom@pabnanews24.com